প্রিয় ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, তোমরা ইতোমধ্যেই ৭ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট হাতে পেয়েছো। আজ ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ৭ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ এর ইসলাম শিক্ষা এর নির্ধারিত কাজ এবং নমুনা উত্তর নিয়ে হাজির হয়েছি। সর্বপ্রথমে চলো দেখে নেয়া যাক ইসলাম শিক্ষা ৭ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টএ কি কি থাকছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে, মাসবুক, মুসাফির, অসুস্থ অবস্থায় সালাত আদায়ের বর্ণনা
নমুনা উত্তর
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সালাত বা নামায খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সালাত প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“নিশ্চয়ই নামায বিশ্বাসীগণের উপর নির্ধারিত সময়ের জন্য ফরজ করা হয়েছে”(সূরা নিসা,আয়াত নং-১০৩)
সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ্র সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। সালত হচ্ছে জান্নাতের চাবিকাঠি । কুরআন ও হাদিসে জামাতে সালাত আদায়ের কথা অনেকবার বলা হয়েছে। একাকী সালাত আদায়ের চাইতে জামাতের সহিত সালাত আদায় করলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সালাত আদায় করা:
নামাজ সর্বস্থায় ফরজ করা হয়েছে। ইসলামি শরীয়ত সক্ষম পুরুষদেরকে জামাতের সাথে নামাজের নির্দেশ দিয়েছে।জামাত তরক করা থেকে হুঁশিয়ার করেছে। এমনকি অন্ধ ব্যক্তিকেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাত তরক করার অনুমতি দেন নি। শুধু তাই নয়, বরং যারা জামাতে নামাজ আদায় করে না তাদেরকে জ্বলিয়ে দেয়ার ইচ্ছাও তিনি পােষণ করেছিলেন। তবে কোন মহামারী দেখা দিলে সেক্ষেত্রে শরীয়াতের অন্য বিধান অবলম্বনের সুযোগ রয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) একটি হাদিসে বলেন, “যদি কোন এলাকায় মহামারীর কথা শুনো তবে সেখানে যেও না। আর যদি কোন এলাকায় তোমাদের থাকা অবস্থায় মহামারী সৃষ্টি হয় তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না।” তিনি আরও বলেন, “কুষ্ঠরোগী থেকে সেভাবে পালাও যেভাবে সিংহ থেকে পলায়ন করো।” বর্ণিত হাদিসের আলোকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমি নিজের ও অন্যদের সুরক্ষার কথা ভেবে বাসায় পরিবারের অন্যান সদস্য মিলে জামাতের সালাত আদায় করাকে উত্তম বলে মনে করি।
সালাতে এক বা দু’রাকআত মাসবুক হলে কীভাবে পড়বঃ
মাসবুক সালাত হল এক বা একাধিক রাকআত শেষে হাওয়ার পর ইমামের সাথে জামআতে অংশগ্রহণ। সালাত মাসবুক হলে তা আদায় করার জন্য নিয়ম রয়েছে। প্রথম নিয়ম হল ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থাতেই নিয়ত করে নামাযে অংশগ্রহণ করব। এরপর, ইমাম সালাম ফিরালে আমি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাব এবং ছুটে যাওয়া রাকআতগুলো রুকু, সিজদাহ্ করে যথারীতি তাশাহ্হুদ, দুরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করব।
সালাতে এক রাকআত মাসবুক হলে, ইমাম সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে যাব এবং ছুটে যাওয়া এক রাকআত একাকী সালাত আদায়ের ন্যায় আদায় করে নিব।
সালাতে দু’রাকআত মাসবুক হলে, ইমাম সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে যাব এবং ছুটে যাওয়া দুই রাকআত একাকী সালাত আদায়ের ন্যায় আদায় করে নিব যেভাবে ফজরের দুই রাকআত ফরজ সালাত একাকী আদায় করা হয়।
মুসাফির অবস্থায় মাগরিব, এশা ও ফজরের সালাত কীভাবে পড়বঃ
মুসাফির অর্থ হল ভ্রমণকারী। কমপক্ষে ৪৮ মাইল দূরবর্তী কোন স্থানে যাওয়ার নিয়তে কোন ব্যক্তি বাড়ি থেকে বের হলে শরিয়াতের পরিভাষায় তাঁকে মুসাফির বলে। তবে মুসাফির ব্যক্তি গন্তব্যস্থলে পৌঁছে কমপক্ষে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত না করা পর্যন্ত তার জন্য মুসাফিরের হুকুম প্রযোজ্য হবে। শরিয়াতে মুসাফিরদের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে সালাত আদায়ের সুযোগ রয়েছে। এঁকে আরবিতে কসর বলা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ
যখন তোমরা কোন দেশ সফর কর, তখন নামাযে কিছুটা হ্রাস করলে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে। নিশ্চয় কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১০১)
মুসাফিদের জন্য কসর সালাত আদায় করার হুকুম আল্লহপাকের এক বিশেষ অনুগ্রহ।
তবে মুসাফির অবস্থায় শুধুমাত্র যোহর, আসর ও এশার সালাত কসর করার অনুমতি আছে। এক্ষেত্রে চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ সালাত মুসাফির বেক্তি হিসাবে আমি দুই রাকআত করে আদায় করে নিব। ফজর, মাগরিব ও বিতিরের সালাতের কসর করার অনুমতি নেই। তাই এগুলো পুরোপুরি আদায় করতে হবে।
অসুস্থ অবস্থায় সালাত (যখন আমি দাঁড়াতে বা বসতে পারি না) :
রোগী বা অক্ষম ব্যক্তির যথানিয়মে সালাত আদায় করতে না পারলে, তার জন্য ইসলামে সহজ নিয়ম এর অনুমোদন রয়েছে। রোগীর সেই সহজ নিয়মে সালাত আদায়কে রুগ্ন ব্যক্তির সালাত বলে।
রুগ্ন ব্যক্তির জন্য জ্ঞান থাকা পর্যন্ত সালাত আদায় করা বাধ্যতামূলক। যত কঠিন রোগ হোক না কেন, সম্পূর্ণরূপে অপারগ না হলে সালাত ত্যাগ করা যাবে না। রোগীর দাঁড়াতে কষ্ট হলে বসে রুকু-সিজদাহর সাথে সালাত আদায় করবে। রুকু-সিজদাহ করতে অক্ষম হলে বসে ইশারায় সালাত আদায় করবে। ইশারা করার সময় রুকু অপেক্ষা সিজদায় মাথা একটু বেশি নত করতে হবে। মাথা দিয়ে ইশারা করতে হবে, চোখে ইশারা করলে সালাত আদায় হবে না। রুগ্ন ব্যক্তি কে বসার সময় সালাতের অবস্থায় বসতে হবে।
যদি রোগী এতই দুর্বল হয় যে বসে থাকা সম্ভব নয়, তবে কিবলার দিকে পা দুটি রাখতে হবে। পা সোজা রেখে হাটু উঁচু করে রাখতে হবে এবং মাথার নিচে বালিশ অথবা এ জাতীয় কিছু জিনিস রেখে মাথা একটু উঁচু রাখতে হবে। শুয়ে ইশারায় রুকু সিজদা করবে অথবা উত্তর দিকে মাথা রেখে কাত হয়ে শুয়ে এবং কিবলার দিকে মুখ রেখে ইশারায় সালাত আদায় করবে। যদি এভাবে ও সালাত আদায় করা সম্ভব না হয়, তবে তার উপর সালাত আর ফরজ থাকেনা মাফ হয়ে যায়। অপারগ অবস্থায় বা কেউ বেহুশ হয়ে পড়লে যদি ২৪ ঘন্টা সময় অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বা তার চেয়ে কম সময় অতিক্রান্ত হয়, তাহলে সক্ষম হওয়ার পর রুগ্ন ব্যক্তি কে কাযা করতে হবে। যদি পাঁচ ওয়াক্তের বেশি সময় অতিবাহিত হয়, তবে আর কাযা করতে হবে না। এতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, সালাত এমন একটি ইবাদত, যা সক্ষমতার শেষ সীমা পর্যন্ত আদায়ের হুকুম দেয়া হয়েছে। কোনভাবেই সালাত ত্যাগ করা যাবে না।